আনলিমিটেড নিউজ ডেস্কঃ মানিকগঞ্জ সদর ও সাটুরিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত মানিকগঞ্জ-৩ আসনটি রাজনৈতিকভাবে দীর্ঘদিন ধরেই গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা পালাক্রমে নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে নির্বাচনী মাঠে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় দেখা যাচ্ছে বিএনপি ও জামায়াতকে।
১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মাফিজুল ইসলাম খান কামাল। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জয়ী হন জাতীয় পার্টির আবদুল মালেক। ১৯৯১ সালে বিজয়ী হন বিএনপির নিজাম উদ্দিন খান এবং ১৯৯৬ সালে এমপি নির্বাচিত হন বিএনপির আবদুল ওহাব খান। ২০০১ সালে বিএনপির হারুনুর রশিদ খান মুন্নু জয়ী হয়ে পরে সরকারের মন্ত্রী হন। এরপর ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত এই আসনের দায়িত্ব পালন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক (আওয়ামী লীগ)।
২০০৮ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মানিকগঞ্জে গত বছরের ৫ আগস্টের পর বিএনপির কার্যক্রম নতুনভাবে জোরদার হয়েছে। জেলা বিএনপির ৬১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠেছে।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে এগিয়ে আছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি আফরোজা খানম রিতা। তিনি বলেন, “বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের হামলা-মামলার শিকার নেতাকর্মীদের পাশে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। আমরা তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমি মানিকগঞ্জ-৩ আসনে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তবে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।”
এর পাশাপাশি মাঠে সক্রিয় রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জামিলুর রশিদ খান। তিনি বলেন, “এরশাদ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে আমি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে মাঠে আছি এবং বিএনপির কঠিন সময়ে নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি। আসন্ন নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী আমি। নির্বাচিত হলে জনগণের আর্থসামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাবো।”
দুইবারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা বলেন, “দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আমি বিএনপির সঙ্গে আছি এবং দলের দুঃসময়ে পাশে থেকেছি। বিভিন্ন সময়ে হামলা-মামলা ও জেল খাটলেও দমে যাইনি। আমি প্রতিটি ইউনিয়ন ও বাজারে গিয়ে ৩১ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রচারণা চালাচ্ছি এবং মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে জনগণের দ্বারপ্রান্তে যাচ্ছি। ২০১৮ সালে দেশনায়ক তারেক রহমান আমাকে ওয়াদা দিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে মনোনয়ন দেবেন—আমি তার সেই ওয়াদার প্রতি সম্মান রেখে ধানের শীষে ভোট চাইছি।”
এছাড়াও মাঠে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মোতালেব হোসেন, যিনি বিভিন্ন স্থানে ৩১ দফা বাস্তবায়ন ও নির্বাচনী জনসংযোগ কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
জামায়াতে ইসলামী থেকে এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মাওলানা মো. দেলওয়ার হোসাইন। তিনি বলেন, “আমি জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। নির্বাচিত হলে দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ গঠন করব। কর্মমুখী নৈতিক শিক্ষা চালু, আধুনিক কৃষি ও উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কাজ করব, ইনশাআল্লাহ।”
এছাড়া খেলাফত মজলিস থেকেও একজন প্রার্থী মনোনয়ন পেতে পারেন। নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম এনসিপি ইতিমধ্যে মানিকগঞ্জে কমিটি গঠন করেছে, তবে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি ও জামায়াতকে ঘিরে। নির্বাচনের প্রধান ইস্যু হবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, কর্মসংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তা। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের প্রভাব থাকলেও এবার তাদের মাঠে তৎপরতা কম। তরুণ ভোটারদের মধ্যে পরিবর্তনের আগ্রহ স্পষ্ট বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।