আনলিমিটেড নিউজ ডেস্কঃ দীর্ঘদিনের দাবির পর অবশেষে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নতুন প্রতীক তালিকায় যুক্ত হলো ‘শাপলা কলি’।
বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে ইসি।
ইসির সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য হালনাগাদ প্রতীকের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে কয়েকটি পুরোনো প্রতীক বাদ দেওয়ার পাশাপাশি নতুন করে কয়েকটি প্রতীক সংযোজন করা হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ‘শাপলা কলি’।
এ বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) শুরু থেকেই ‘শাপলা’ প্রতীককে নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে দাবি করে আসছিল। তবে পূর্ববর্তী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ইসির তালিকায় এই প্রতীকটি না থাকায় দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতীক বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হয়।
দলটির নেতারা বারবার বলেছিলেন, শাপলা প্রতীকই তাদের রাজনৈতিক আদর্শের প্রতীক, যা নবজাগরণ ও পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে জনগণের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত।
ইসির কর্মকর্তারা এতদিন জানিয়ে আসছিলেন, ১১৫টি নির্ধারিত প্রতীকের তালিকায় শাপলা না থাকায় তা কোনো দলকে দেওয়া সম্ভব নয়।
এমনকি গত ২৩ সেপ্টেম্বর এক ব্রিফিংয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, শাপলা প্রতীক বরাদ্দের কোনো সুযোগ নেই, কারণ এটি আনুষ্ঠানিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয়।
তবে প্রায় এক মাস পর কমিশনের অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা শেষে নতুন তালিকায় ‘শাপলা কলি’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ইসির ঘোষণার পরপরই এনসিপি নেতারা ঢাকায় এক তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে সিদ্ধান্তটিকে ন্যায়সংগত ও জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেছেন।
দলটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, শাপলা প্রতীক আমাদের আন্দোলনের প্রতীক। এটি আমাদের নৈতিক জয়ের প্রতীকও বটে। জনগণের দাবি উপেক্ষা করে কেউ চিরকাল প্রতীক আটকে রাখতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, আইনগত কোনো বাধা না থাকায় আমরা শুরু থেকেই আশাবাদী ছিলাম যে, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন জনগণের মনোভাবের প্রতিফলন ঘটাবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইসির এই সিদ্ধান্ত নতুন দল এনসিপির জন্য বড় ধরনের মনস্তাত্ত্বিক সাফল্য। তবে তারা মনে করছেন, নির্বাচন সামনে রেখে নতুন প্রতীক যুক্ত করা কমিশনের নিরপেক্ষতার প্রশ্নেও আলোচনার জন্ম দিতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের একজন বলেন, প্রতীক নির্বাচনের মতো বিষয়ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসি এখানে আইনগতভাবে সঠিক থাকলেও সময়কাল নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে।
গত বছর ইসি নিবন্ধিত দলের প্রতীকসংক্রান্ত সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে মোট ১১৫টি প্রতীক সংরক্ষণ করেছিল। সেখানে ‘শাপলা’ বা ‘শাপলা কলি’ ছিল না। কিন্তু নতুন প্রজ্ঞাপনে শুধু শাপলা কলিই নয়, আরও কিছু প্রতীক পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
কমিশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, একাধিক দলের অনুরোধ, যাচাই-বাছাই ও আইনগত ব্যাখ্যার পরই এই হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনের আগে প্রতীক তালিকা প্রকাশকে নির্বাচন কমিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। নতুন প্রতীক সংযোজনের মাধ্যমে আসন্ন নির্বাচনে অন্তত তিনটি নতুন নিবন্ধিত দল অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক মহলে এখন আলোচনার বিষয়, ইসির এই সিদ্ধান্ত কি কেবল প্রশাসনিক, নাকি রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এনসিপি গত কয়েক মাসে যেভাবে সংগঠন বিস্তার ও রাজনৈতিক কর্মসূচি জোরদার করেছে, তাতে তাদের দাবিকে উপেক্ষা করা কমিশনের জন্য কঠিন হয়ে উঠেছিল।
নির্বাচন কমিশনের হালনাগাদ প্রতীক তালিকায় যুক্ত হলো ‘শাপলা কলি’। দীর্ঘ দাবির পর এনসিপি এই প্রতীক পাওয়াকে আন্দোলনের ন্যায়সংগত পরিণতি হিসেবে দেখছে।
তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, নির্বাচন সামনে রেখে ইসির সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক বার্তা বহনও করতে পারে।